September 28, 2024, 8:15 pm

সংবাদ শিরোনাম
মজলুম সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী’র রুহের মাগফিরাতে দোয়া অনুষ্ঠান বৈষম্যের পদভারে পিষ্ঠ নাটোরের প্রাণ এ্যাগ্রো এবং পাঁচ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষনা সাবেক পৌর মেয়র মোঃ আলমগীর শেখ তিতু’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০ দিনাজপুরে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত ৪ সিএনজি সহ চার ছিনতাইকারী জনতার হাতে আটক, পালিয়ে যাওয়ার সময় গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে গলায় রশি পেচিয়ে বৃদ্ধ মহিলার আত্মহত্যা ময়মনসিংহে ১৬৬ বস্তা জিরা ও ৩০০ পিস ভারতীয় কম্বল জব্দ, আটক ৪ চিলমারীতে সেই শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে হত্যা মামলার পলাতক আসামীকে কুমিল্লার ময়নামতি থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব বাগআঁচড়া-নাভারণ সড়কের বেহাল দশা,দেখার কি কেউ নেই?

ঝর্ণার পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ ভুল বুঝতে পেরেছে মসজিদ কমিটি

ব্যুরো চিফ মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় এক তরুণীর পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘটনায় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছে মসজিদ কমিটি। এ জন্য কমিটি দুঃখ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন কুলাউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী।
কুলাউড়ার এই ঘটনাটি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার(১ ফের্রুয়ারি) বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এলে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভুক্তভোগী পরিবার ও গ্রামের মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ইউএনও। বৈঠকে কুলাউড়া থানার ওসি বিনয় ভূষণ দেব, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে ইউএনও ফরহাদ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে মসজিদ কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়াও উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেন, তারা বয়স্ক মানুষ, ইন্টারনেট চালাতে পারেন না। এলাকায় রটে যায় যে ঝর্ণা একটি হিন্দু ছেলেকে বিয়ে করেছেন। তাই তার বাবাকে তারা (মসজিদের সভাপতি ও সম্পাদক) ডাকায়, কিন্তু উনি না আসায় তারা বলেন যে উনি উনার মতো চলুক, আমরা আমাদের মতো চলব।
ইউএনও আরও বলেন, তবে আজ তারা ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঝর্ণার বাবার কাছে। সেই সঙ্গে লিখিত দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে আর এমন কিছু করবেন না। ঝর্ণার পরিবারও খুশি হয়েছেন, তারাও লিখিত দিয়েছেন যে তারা এখন খুশি।
উল্লেখ্য, উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া ঝর্ণা চৌধুরীর জীবনাচার নিয়ে আপত্তি তুলে কয়েকদিন আগে দেশে তার পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ঝর্ণার বাবা হাজি আব্দুল হাই চৌধুরী বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে জানান।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ঝর্ণা চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমি কী পোশাক পরব, কার সঙ্গে ছবি তুলব, কার সঙ্গে চলব সেটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অধিকার। সেটা তো আমাকে এলাকার লোক নির্ধারণ করে দিতে পারে না। মসজিদ কমিটির লোকজন অতি উৎসাহী হয়ে অনধিকার চর্চার মাধ্যমে আমার পরিবারকে একঘরে করে দিয়েছে। এসব নারীবিদ্বেষী, মৌলবাদীদের অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম। তবে অভিযুক্তরা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় তার কাছে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।
অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাটেরার কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজী আব্দুল হাই চৌধুরী (৭০)। তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এর মধ্যে ঝর্ণা চৌধুরী দ্বিতীয় সন্তান। ঝর্ণা ২০০৮ সাল থেকে সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পজেটিভ বাংলাদেশে’র সদস্য এবং ২০১৩ সাল থেকে প্রধান সমন্বয়ক ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন স্থানীয়ভাবে। আর এজন্য এলাকার কিছু মানুষ বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়েছিলেন। সিলেটে পড়াশুনার সময় এলাকার মানুষ ঝর্ণাকে নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করেন ফেসবুকে। বিষয়টি নিয়ে সিলেটের শাহপরাণ থানায় একটি জিডি করেন ঝর্ণা। ঝর্ণা আইন বিষয়ে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সম্পন্ন করে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে তাঁর সংগঠনের চেয়ারম্যান জয়তূর্য চৌধুরীসহ কয়েকজনের সাথে তোলা ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন। এরপর ঝর্ণার গ্রামের কিছু মানুষ তাঁর বিদেশে যাওয়া ও এমন ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ এবং তাঁর জীবনাচরণ নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন ফেসবুকে। এদিকে ঝর্ণার পরিবারকে নিয়ে এলাকায় অপপ্রচার ছড়িয়ে হেয় প্রতিপন্ন করা হচ্ছে। এলাকার পঞ্চায়েতের লোকজন আব্দুল হাই চৌধুরীর কাছে জানতে চান তাঁর মেয়ে ঝর্ণা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হিন্দু ছেলে জয়তূর্যর সাথে চলাফেরা এবং ছোট কাপড় কেন পরিধান করে। মেয়ের এমন জীবনাচরণের কারণে তাঁকে এক ঘরে করার হুমকিও দিতে থাকেন।
আব্দুল হাই চৌধুরী বলেন, মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শামসুল ইসলাম মাখন ও সম্পাদক আমীন আলী আমাকে গত শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) কমিটির শালিসী বৈঠকে গিয়ে আমার মেয়ের এরকম চলাফেরার জবাব দিতে বলেন। আমি অসুস্থ থাকায় বৈঠকে যেতে পারিনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা আমাদেরকে সমাজচ্যুত করে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সিদ্ধান্ত ও মিথ্যা অপপ্রচারের ছড়ানোয় আমরা পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
এ ব্যাপারে কমিটির সভাপতি শামছুল ইসলাম মাখন ও সম্পাদক আমিন মিয়া মোবাইলে বলেছিলেন, ঝর্ণার এমন চলাফেরা নিয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন আমাদেরকে চাপ দেন। আমরা কমিটির লোকজন তাঁর বাবা আব্দুল হাই চৌধুরীর কাছে দেড় মাস আগ থেকে বিষয়টি জানতে চাই। তিনি আমাদের সাথে আর কোন যোগাযোগ করেন নি। গত শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) পঞ্চায়েতের লোকজন মসজিদে বসে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। আমরা তাঁদের সমাজচ্যুত করিনি। তিনি পঞ্চায়েতকে গুরুত্ব দেননি সেহেতু উনি উনার মতো করে চলবেন। আমরা আমাদের মতো চলবো। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আব্দুস সামাদ আজাদ ,
মৌলভীবাজার

Share Button

     এ জাতীয় আরো খবর